নিজস্ব প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল জোড়পুকুরিয়া ডিগ্রী কলেজে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কলেজ)অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক মিন্টু অনিয়ম,দুর্নীতির অভিযোগে আত্মগোপনে রয়েছেন। কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলেও অধ্যক্ষ মিন্টু লাপাত্তা রয়েছেন। তেরাইল জোড়পুকুয়িা ডিগ্রী কলেজ এর নাম বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু কলেজ নামকরণ করায় এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন অবৈধ অধ্যক্ষ মাসুম উল হক মিন্টু।
এলাকাবাসী ইতোমধ্যেই তাকে আল্টিমেটাম দিয়েছে যে, কলেজের নাম তেরাইল জোড়পুকুরিয়া ডিগ্রী কলেজ করে যেন তিনি কলেজে পা রাখেন।ইতোমধ্যেই এলাকার ছাত্র জনতা বঙ্গবন্ধু কলেজের নাম মুছে দিয়ে গত ১৪/৮/২০২৪ ইং তারিখে মিন্টুকে অব্যাহতি দিয়ে আবারও জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে বিতর্কিত শিক্ষক জিনারুলকে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত দিয়েছেন।
গাংনী উপজেলার শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এলাকা হিসেবে তৎকালীন সময়ে ‘বঙ্গবন্ধু কলেজ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হিসেবে ভোমরদহ গ্রামের গোলাম মোস্তফা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতিসহ নানা শাখা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। একপর্যায়ে তেরাইল গ্রামের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধি পুরণ না হওয়ায় অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করে। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর চাপের মুখে পুণরায় গোলাম মেস্তফাকে দায়িত্বভার দেয়া হয়।
নানা কারনে কলেজ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করলে অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা অবশেষে মারা যান।এই মৃত্যু নিয়ে নানা গুন্জন রয়েছে। তারপরেই কলেজ নিয়ে শুরু হয় অর্থবাণিজ্য। তৎকালীন কলেজ পরিচালনা কমিটি অবৈধ উপায়ে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কলেজের সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ রেখে সিনিয়র পর্যায়ের তালিকায় ৭নং ক্রমিকধারী জুনিয়র শিক্ষক মাসুম উল হক মিন্টুকে (যার সনদপত্র নিয়ে সন্দেহ রয়েছে) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। ৫ জন সিনিয়র শিক্ষককে টপকিয়ে ম্যানেজিং কমিটি তার আস্থাভাজন অনুসারী লোককে অধ্যক্ষ পদে বহাল করেছেন।বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসাবে মনোনীত হয়েছেন।
নাম না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ এর সময়ে এমপি মহোদয়ের চাপে অবৈধভাবে জ্যেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন না করে মাসুম উল হক মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ৫/১/২০২১ ইং তারিখে নিয়োগ দেন। তিনি ৪/৭/২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব চালাবেন মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। এ সময়ের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি যাচাই করে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেবেন।এছাড়াও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মিন্টুর পাশের সনদপত্র নিয়ে নানা সন্দেহ রয়েছে। তিনি ভারতের কলকাতায় লেখাপড়া করেছেন।
জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা ২০২১-১১(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, অধ্যক্ষ হতে হলে কোন কলেজে কমপক্ষে ৩ বছরের সহকারী অধ্যাপকসহ ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু তার মাত্র ৮ মাসের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে অভিজ্ঞতা থাকলেও সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব অনিয়ম চাপা দিতে গোপনে রেজুলেশন করে কাগজে কলমে ৫/৭/২০২২ ইং তারিখ হতে ৩১/৭/২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত কলেজের সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক তুহিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে মাহবুবুল হক তুহিন জানান, আমাকে কাগজে কলমে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল শুনেছি কিন্তু অধ্যক্ষের চেয়ারে মিন্টু সাহেবই বসতেন।এভাবেই চলছিল কলেজ। ইতোমধ্যেই এলাকাবাসী আবারও অবৈধভাবে জিনারুল ইসলাম নামক (গণিত) শিক্ষককে জোর পুর্বক অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়েছেন। জিনারুল সম্পর্কে তিনি জানান, জিনারুল ইসলাম পূর্বে গাংনী উপজেলার কুমারীডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। তিনি ২০০৪ ইং সালের মে মাস পর্যন্ত চাকরী করেছেন। কলেজে যোগদান করেছেন ২০০২ সালে । ৫-৬ জন সহকারী অধ্যাপককে পিছনে রেখে জ্যেষ্ঠ্যতার ৮ নং তালিকায় থেকে তিনি অধ্যক্ষ হয়েছেন।
ব্যাকডেটে তিনি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। যাহা শিক্ষা নীতি লঙ্ঘনের সামিল। এনিয়ে নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধি মেহেরপুর মহিলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, নিয়োগ বোর্ডের ৪ জনের স্বাক্ষর ছিল। আমি অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলাম।
শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন না পেয়ে তিনি গোপনে ৭/৭/২০২২ ইং তারিখে ‘দৈনিক খোলা কাগজ’ ও স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক কুষ্টিয়া’ তে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১/৮/২০২২ ইং তারিখে পূর্ণ অধ্যক্ষ পদে বহাল আছে।